বান্দরবানের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) নেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে মুখোমুখি সংলাপে বসার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। তবে তাঁদের শীর্ষ পর্যায়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দফা অনলাইন সংলাপে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতাদের প্রস্তাবে কমিটির সঙ্গে সরাসরি সংলাপে বসার ও লিখিতভাবে দাবিনামা পেশ করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন কেএনএফ নেতারা।
এ ছাড়া দুই পক্ষের সংলাপ অব্যাহত রাখা, সংলাপে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি থেকে পর্যটকদের বিরক্ত না করার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সকাল ১০টায় বান্দরবান জেলা পরিষদের সভাকক্ষ থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতারা অনলাইন সংলাপে যোগদান করেন। সংলাপে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১০ জন সদস্য অংশ নেন। নেতৃত্বে ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা, বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যসচিব লালজার লাম বম। অপর দিকে লালংময় বম ওরফে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ময়ার নেতৃত্বে কেএনএফের পক্ষে ছিলেন লালসাং লম বম, লালসাংরেম বম ও জেরসিংলিয়ান বম। কেএনএফ নেতারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ল্যাপটপে ও মুঠোফোনে অংশ নেন। লালজংময় বমকে সাদা পর্দা টানানো একটি কক্ষে সোফার ওপর বসে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টার সংলাপে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে কেএনএফের নেতাদেরকে মুখোমুখি সংলাপ অনুষ্ঠান, সংবিধানের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে লিখিত দাবিনামা পেশ করার আহ্বান জানানো হয়। দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো স্থানে সংলাপ আয়োজনে কেএনএফের নেতাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করে কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা ও লালজার লম বম বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারের উচ্চ মহলে আলাপ হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো সমস্যা হবে না।
কেএনএফের প্রধান নাথান বমের ব্যক্তিগত সচিব লালজংময় বম ও লালসাং লম বম বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না হলে সরাসরি সংলাপে বসতে তাঁরা নিরাপদ মনে করছেন না। তাঁরা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি সরকারের অনুমোদিত কি না এবং এখতিয়ার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বলেছেন, অনলাইনে শান্তি সংলাপ শুরু হওয়ার পর কেএনএফ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখেছে। কিন্তু বম জনগোষ্ঠীর লোকজনকে কেএনএফের সঙ্গে জড়িয়ে নানাভাবে হয়রানি ও হেনস্তা করা হচ্ছে। অনেক পাড়াবাসী নিয়মিত কাজকর্ম করতে পারছেন না। অবশ্য তাঁরা বলেছেন, সংলাপ অফলাইনে শুরু না হলেও অনলাইনে অব্যাহত রাখা হবে। অফলাইন বা সরাসরি সংলাপের ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দুর্গমে এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে কেএনএফ। বম, পাংখোয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রোদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে দাবি করে সশস্ত্র সংগঠনটি। তাদের গোপন আস্তানায় সমতলের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের অভিযোগ ওঠে।
গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে কেএনএফ ও শারক্কীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিত অভিযান শুরু করে। এযাবৎ বেশ কিছু জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেএনএফের গুলিতে সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা ও এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গত ২৯ মে বান্দরবানের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে ১৯ জুলাই এই কমিটির সঙ্গে কেএনএফের নেতাদের অনলাইন সংলাপ হয়েছে। সুত্র: প্রথম আলো
পাঠকের মতামত